বাবার সাথে গাড়িতে পাশের সীটে বসে চোখের পানি মুছতে মুছতে বাসায় ফিরছিলেন,একটু মনের শান্তি পাওয়ার জন্য বাবার সাথে গল্প শুরু করলেন।
মেয়ে- বাবাকে প্রশ্ন করল?
বাবা পৃথিবীতে এমন কেউ আছে তোমার মত?
বাবা বললেন কিরম মা?
মেয়ে বলতে শুরু করলেন, তুমি এমন বাবা- মায়ের সন্তান? যার বাবা – মা দুজনেই রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান ছিলেন। যার বাবা দেশের সেনা প্রধান ছিলেন,যার বাবা দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন,যার বাবা দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন,যার বাবা দেশের জন্য মাঠে ময়দানে যুদ্ধ করে বীর উত্তম পদক পেয়েছিলেন?
যার মা ৯ বছর রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে দেশের মানুষকে গণতন্ত্র এনে দিয়েছিলেন?
বাবার মন খারাপ, তাহার মা দীর্ঘদিন পর দেখা হয়ে হঠাৎ করে চলে গেল, মেয়ের কথাগুলো শুনতে কিছুটা ভালোও লাগছে এবং উত্তর দিয়ে বলল জানি না তো মা?
মেয়ে আবার বলল? বাবা তোমার বাবা চলে গেছেন আজ প্রায় ৪৫ বছর হয়েছে?
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তোমার বাবাকে শহীদ বলে ডাকে, একজন নয়, দশ জন নয়, এক লাখ নয়, কোটি নয়, সমস্ত মানুষ পরম শত্রুও তোমার বাবাকে ভালোবাসে, তোমার বাবাকে শহীদ বলে সম্বোধন করে।
যে মানুষটিকে সারা বাংলার মানুষ শহীদ সম্বোধন করে আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দিবেন।
মেয়ে বলেন, বাবা যারা শহীদ হন তাদের তো কোন বিচার হয় না, আল্লাহ তাদেরকে বিনা বিচারে বেহেস্ত নসিব করেন। আমার দাদুভাই নিশ্চয়ই বেহেস্তবাসী হবেন।
বাবার মন খারাপ কারণ জন্মদাত্রী মা অসুস্থ মমতাময়ী মা প্রায় ১২/১৪ ঘন্টা জার্নি করে দেশে যাচ্ছেন, জানে না কি হয়, এই চিন্তায় তিনি আল্লাহ আল্লাহ করছিলেন।
মেয়ের গল্প শুনতে শুনতে গাড়ি চালিয়ে চালিয়ে আস্তে আস্তে বাসার দিকে যাচ্ছেন।
মেয়ে, বাবার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে এবং বাবাকে স্বাভাবিক করার জন্য আবার বলল, বাবা দাদি মণি যখন কালকে দেশে ফিরবেন কোটি কোটি মানুষ দাদি মণিকে রিসিভ করার জন্য আসবেন, দাদি মণিকে শেষ বয়সে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ সম্মান এবং শ্রদ্ধা করছেন, মেয়ে আরও বলছেন, বাবা আমার দাদি মণির প্রতিপক্ষ যিনি দাদুকে সব সময় নির্যাতন করেছেন তিনি দেশ থেকে মালবাহী হেলিকপ্টারে করে কোনরকম জীবন বাঁচিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন আর আমার দাদি মণির জন্য পৃথিবী বিখ্যাত রাষ্ট্র, সম্মানিত এবং ধনী রাষ্ট্র কাতারের আমীর সম্মান এবং শ্রদ্ধা করে অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছেন?
মেয়ের মুখে বাবা -মায়ের নাম, খ্যাতি আর সুনামের গল্প শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু টলটল করে পড়ছে।
বাবা মনে মনে বলছে সত্যিই আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি মহোদয়ের ঘরে জন্ম নিয়েছি। আসলে পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই আমার মতো। যার বাবা মা দুজনেই নিজ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভালোবাসা অর্জন করে সারা পৃথিবীতে যাদের গ্রহণযোগ্যতা।
মেয়ে আবার বলল, বাবা তুমি তো অনেক বিখ্যাত বাবা মায়ের সন্তান? আমারও ইচ্ছে হচ্ছে তোমার মত এক বিখ্যাত বাবা-মায়ের সন্তান হতে, তুমি কি পারবে? বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে আমার দাদু আর দাদির মতো জগৎ বিখ্যাত হতে। আমি চিৎকার করে বলতে পারবো, আমার বাবা দেশের মানুষের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে গেছেন। আমি সেই বাবার সেই সন্তান আমিও বাবার মতো আপনাদের জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করতে চাই।